স্কিপ করে মূল কন্টেন্ট এ যান

কার্বন দক্ষতা

note

এই অনুবাদটি গ্রিন সফটওয়্যার প্র্যাকটিশনার্স কমিউনিটি দ্বারা তৈরি। এটির সমর্থন সীমিত এবং কোর্সের সর্বশেষ ইংরেজি সংস্করণের সাথে নাও মিলতে পারে।

নীতি

যতটুকু সম্ভব কম কার্বন নিঃসরণ করুন।

ভূমিকা

আমাদের পরিবেশের উপর গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো কিভাবে প্রভাব ফেলে, সেটা জানা থাকলে সফটওয়্যারের কার্বন ফুটপ্রিন্টও সহজে বুঝতে পারবেন। আপনি জানতে পারবেন পরিবেশে কী কী গ্রিনহাউস গ্যাস আছে, সেগুলো কীভাবে তৈরি হয় ও পরিমাপ করা হয়, এবং বহির্বিশ্বে এই গ্যাসের নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন কোম্পানি কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে।

আপনি জিএইচজি প্রোটোকল (GHG Protocol) কী এবং গ্রিন সফটওয়্যার নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের জন্য এর মানে কী, সেটা জানতে পারবেন।

মূল ধারণাগুলো

বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global warming) বনাম জলবায়ু পরিবর্তন (Climate change)

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলো ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যেকার সময়ের আগে থেকে দেখা পৃথিবীর আবহাওয়ার ব্যবস্থার একটি লম্বা সময়ের গরম হয়ে ওঠা, যার প্রধান কারণ হলো মানুষের কার্যক্রম, বিশেষ করে কয়লা-পেট্রোলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো। জলবায়ু পরিবর্তন হলো তাপমাত্রা আর আবহাওয়ার ধরনে বহু দিনের পরিবর্তন। এই পরিবর্তনগুলো স্বাভাবিকভাবেও আসতে পারে, কিন্তু ১৮০০-র পর থেকে মানুষের কাজকর্মই জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জলবায়ু আর আবহাওয়া

আবহাওয়া বলতে কম সময়ের জন্য বায়ুমণ্ডলের পরিস্থিতিকে বোঝায়। জলবায়ু বলতে অনেক লম্বা সময়ের ধরে বায়ুমণ্ডলের পরিস্থিতিকে বোঝায়। বায়ুমণ্ডলের লম্বা সময়ের অবস্থার কোনো বদল হলে কম সময়ের অবস্থারও বদল হবে। একটি সহজ তুলনা হলো, যদি বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বাড়ে, তাহলে যেকোনো ঋতুতে আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রাও বাড়বে। জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য আবহাওয়ার পরিস্থিতির যে সব পরিবর্তন মাপা সম্ভব, তার কিছু উদাহরণ হলো:

  • বৃষ্টিপাত সহ জলচক্রের পরিবর্তন
  • বরফের গলন
  • স্থলভাগ, বায়ু এবং মহাসাগরের উত্তাপ বৃদ্ধি
  • মহাসাগরের স্রোত, অম্লতা এবং লবণাক্ততার পরিবর্তন

এই পরিবর্তনগুলো বন্যা (উপকূলীয় অঞ্চলে এবং বর্ধিত বৃষ্টিপাতের কারণে উভয় ক্ষেত্রেই), খরা, দাবানল এবং আরও ঘন ঘন প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

গ্রিনহাউস গ্যাস এবং গ্রিনহাউস ইফেক্ট

গ্রিনহাউস গ্যাস হলো স্পেশাল কিছু গ্যাস, যা সূর্যের আলো থেকে আসা তাপ পৃথিবীর বাতাসে ধরে রাখে। এই গ্যাসগুলো একটি কম্বলের মতো কাজ করে আর পৃথিবীর উপরিভাগের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এটা একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক ব্যাপার, কিন্তু মানুষ মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ করায় এটি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন পৃথিবী জুড়ে আবহাওয়া এত তাড়াতাড়ি পাল্টাচ্ছে যে, গাছপালা ও প্রাণীরা এর সাথে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে।

গ্রিনহাউস গ্যাস ও গ্রিনহাউস প্রভাব পৃথিবীর সব প্রাণের জন্য খুবই জরুরি এবং এগুলো সাধারণত প্রাণী, আগ্নেয়গিরি ও ভূতাত্ত্বিক কার্যক্রম থেকে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হয়। এই গ্যাসগুলোর উপস্থিতি পৃথিবীতে না থাকলে আমাদের পৃথিবী যে পরিমাণ তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারতো, গ্রিনহাউস প্রভাব সূর্যের তাপ ধরে রেখে পৃথিবীকে তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা ধরে রাখতে সাহায্য করে। পৃথিবীতে অন্যান্য অনেক স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মতোই, গ্রিনহাউস প্রভাবও হলো একটি নিখুঁত স্বাভাবিক ভারসাম্য, যা নানা কারণ বা ফেক্টরের ফলে বিগড়ে যেতে পারে।

কার্বন এবং CO2eq

"কার্বন" শব্দটি প্রায়ই একটি মোটা দাগের শব্দ হিসাবে ব্যবহার করা হয়, যার দ্বারা সব ধরনের কার্বন নিঃসরণ ও মানুষের কার্যক্রমের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন-এর ওপর যে প্রভাব পরছে তা বোঝানো হয়। এই প্রভাব পরিমাপ করার জন্য কার্বন সমতা (Carbon equivalence) বা CO2eq / CO2-eq / CO2e নামে একটি মেট্রিক ব্যবহার করা হয়। যেমন ধরুন, ১ টন মিথেন-এর (Methane) উষ্ণতা ক্ষমতা ২০ বছরে প্রায় ৮৪ টন CO2-র উষ্ণতা ক্ষমতার সমান। তাই আমরা ১ টন মিথেন কে ৮৪ টন CO2eq হিসাবে ধরে নিতে পারি। আরও সংক্ষেপে আমরা শুধু "কার্বন" বলতে পারি, যা দিয়ে সাধারণত সব গ্রিনহাউস গ্যাস (GHGs)-কেই বোঝানো হয়।

জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব ও দিন দিন বাড়তে থাকা মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সারা বিশ্বে এই সমস্যাগুলো মেটানোর এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে, যাতে জলবায়ু পরিবর্তনের খারাপ প্রভাব কমানো এবং রিভার্স করা যায়।

পৃথিবীর তাপমাত্রার দ্রুত বৃদ্ধি কমাতে ২০১৫ সালে ১৯৬টি দেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নামে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তির লক্ষ্য হলো বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রাক-শিল্প সময়ের (Pre-industrial levels) থেকে ২°C-এর মধ্যে রাখা, তবে কাম্য মাত্রা ১.৫°C-এর নিচে রাখতে পারলে তা আরো ভালো। প্রতি পাঁচ বছর পর পর চুক্তিটি রিভিউ করে দেখা হয় এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো, সেইসাথে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তৈরি হওয়া পরিবেশগত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হওয়া ও মানিয়ে নেওয়ার জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। পাশাপাশি, প্রতিটি দেশে তাদের অগ্রগতি Nationally Determined Contribution (NDC) এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। চুক্তিটিতে এখন পর্যন্ত ১৯৫টি দেশ সই করেছে।

United Nations Framework Convention on Climate Change (UNFCCC) হলো এমন একটি গ্রুপ, যা তৈরি করা হয়েছে বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা সহনীয় মাত্রায় রাখতে, যেন জলবায়ু ব্যবস্থার ওপর এটি কোনো বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে না পারে।

UNFCCC এর সব দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রতি বছর COP (Conference of the Parties) নামে একটি বড় সম্মেলন হয়। এই সম্মেলনে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অংশ হিসাবে, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমানোর জন্য প্রতিটি দেশ কতটুকু এগিয়েছে, তা যাচাই ও মূল্যায়ন করা হয়। এই COP সম্মেলনের মাধ্যমে সবাই একত্রিত হয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কমানোর জন্য নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নেয়। কার্বন নিঃসরণ কমানোর কৌশল, কম কার্বন নিঃসরণ সম্পর্কিত স্ট্র্যাটেজির জন্য টাকা জোগাড় করা এবং প্রাকৃতিক আবাসস্থল সংরক্ষণ করা, এগুলোই সাধারণত এই সভার মূল আলোচনার বিষয়।

জাতিসংঘ ১৯৮৮ সালে IPCC (Intergovernmental Panel on Climate Change) তৈরি করে, যার উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন দেশের সরকারদের গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তথ্য দেওয়া, যা দিয়ে তারা জলবায়ু সংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করতে পারবে। IPCC-র রিপোর্টগুলো আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিবর্তন আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসাবে কাজ করে। IPCC হলো বিভিন্ন সরকারের একটি গ্রুপ, যারা জাতিসংঘ অথবা World Meteorological Organization (WMO)-এর সদস্য। বর্তমানে IPCC-তে মোট ১৯৫টি সদস্য দেশ আছে।

আমাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কার্বন এফিশিয়েন্ট (Carbon efficient) হওয়ার মানে হলো প্রতি ইউনিট (unit) কাজের জন্য যতটুকু কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তার পরিমাণ কমিয়ে আনা। আমাদের লক্ষ্য হলো, বায়ুমণ্ডলে প্রতি গ্রাম কার্বন নিঃসরণ বিনিময়ে যেন সর্বোচ্চ সুবিধা বের করে নিতে পারি।

alt_text

সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে জলবায়ু সমাধানে আমাদের ভূমিকা হলো কার্বন-এফিশিয়েন্ট অ্যাপ্লিকেশন বানানো। কার্বন এফিশিয়েন্ট হওয়ার মানে হলো এমন সফটওয়্যার তৈরি করা যা আপনার বা আপনার ব্যবহারকারীদের জন্য একই সুবিধা দেবে, কিন্তু সর্বনিম্ন কার্বন নিঃসরণ করবে।

সারাংশ

  • গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো হলো কিছু স্পেশাল গ্যাস যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সাহায্য করে। সব ধরনের নিঃসরণ ও কাজের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ওপর যে প্রভাব পড়ে, সেটা বোঝাতে প্রায়ই "কার্বন" শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এই প্রভাব মাপার জন্য CO2eq নামে একটি মাপকাঠি/মেট্রিক ব্যবহার করা হয়।

  • UNFCCC-এর মতো আন্তর্জাতিক দলগুলো মিলে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কমিয়ে আনার জন্য একজোট হয়েছে। তাদের লক্ষ্য হলো উষ্ণতা বৃদ্ধির সীমা কাম্য মাত্রা ১.৫°C-এর মধ্যে রাখা। ২০১৫ সালে IPCC-এর মাধ্যমে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি-তে এটি স্থির করা হয় এবং নিয়মিত COP সম্মেলনে এটি যাচাই করা হয়।

  • আমরা যাই করি না কেন, সেটার মাধ্যমে কার্বন বাতাসে নিঃসরণ হয়, আর আমাদের লক্ষ্য হলো যতটা সম্ভব এই নিঃসরণ কমিয়ে আনা। এটাই হলো গ্রিন সফটওয়্যারের প্রথম নীতি: কার্বন এফিশিয়েন্সি বা দক্ষতা (Carbon Efficiency) অর্থাৎ প্রতি ইউনিট কাজের জন্য যতটা সম্ভব কম কার্বন নিঃসরণ করা।

কুইজ

GHGs কি?

কার্বন সমতা (carbon equivalent) কে সংক্ষেপে কীভাবে লেখা যায়?

IPCC কি?

COP কি?

প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য কাম্য সীমা কত নির্ধারণ করা হয়েছিল?

নিচের কোন বাক্যটি সত্য?

সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের মূল চালক কী?

আমাদের গ্রিনহাউস গ্যাসের কেন প্রয়োজন?